সুব্রত বাইন

সুব্রত বাইনের অপরাধজগতে প্রবেশ

সুব্রত বাইন, বাংলাদেশের অপরাধ জগতের এক কুখ্যাত নাম, সম্প্রতি কুষ্টিয়ায় সেনাবাহিনীর অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছেন। এই গ্রেপ্তারের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে পলাতক থাকা এই শীর্ষ সন্ত্রাসীর অপরাধজগতের অধ্যায়ে একটি নতুন মোড় এসেছে।


সুব্রত বাইনের জন্ম ১৯৬৭ সালে ঢাকার হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে। মূলত বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার জোবারপাড় গ্রামের সন্তান তিনি। ছেলেবেলায় পড়াশোনা শুরু করেন বরিশালের অক্সফোর্ড মিশন স্কুলে, পরে ঢাকায় শেরেবাংলা স্কুলে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন এবং সেখান থেকেই এসএসসি পাস করেন। কলেজে ওঠার পর সিদ্ধেশ্বরী কলেজে ভর্তি হতে গিয়ে এক নেতার সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর, আর সেই সূত্র ধরে অস্ত্র হাতে নেওয়া এবং অপরাধজগতে প্রবেশ। মগবাজার এলাকায় গড়ে তোলেন নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী, যা পরবর্তীতে ‘সেভেন স্টার’ নামে পরিচিতি পায়। ১৯৯৩ সালে রাজধানীর মধুবাজারের এক সবজিবিক্রেতা খুনের ঘটনায় পুলিশের নজরে আসেন সুব্রত বাইন। এরপর মগবাজারের বিশাল সেন্টার নির্মাণের সময় চাঁদাবাজির ঘটনায় তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়ে। দ্রুতই হয়ে ওঠেন ভয়ংকর অপরাধী, মগবাজার, রমনা, কারওয়ান বাজার, মধুবাগ—এসব এলাকা ছিল তাঁর দখলে।


আন্তর্জাতিক অপরাধজগতে সুব্রত বাইন

২০০১ সালে তাঁর নামে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি হয়। পরবর্তীতে কলকাতায় পালিয়ে যান এবং সেখানেও অপরাধের জগতে সক্রিয় থাকেন। ২০০৮ সালে কলকাতা পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। পরে পালিয়ে যান নেপাল, আবার ধরা পড়েন। ২০১২ সালে নেপালের কারাগার থেকে সুড়ঙ্গ কেটে পালিয়ে ফের ভারতে অনুপ্রবেশ করেন। সেখানে ফতেহ আলী নামে ছদ্মবেশে অবস্থান করছিলেন।


সর্বশেষ গ্রেপ্তার ও পরবর্তী পদক্ষেপ

২০২৫ সালের ২৭ মে কুষ্টিয়া শহরের কালীশংকরপুর এলাকায় সেনাবাহিনীর অভিযানে সুব্রত বাইন এবং তাঁর সহযোগী মোল্লা মাসুদ গ্রেপ্তার হন। অভিযানে ২টি পিস্তল, ৪টি ম্যাগাজিন এবং ১০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর তাঁদের ঢাকায় আনা হয় এবং অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করা হয়। আদালত সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদসহ চারজনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে পাঠিয়েছেন।

সুব্রত বাইনের গ্রেপ্তার বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য। এই গ্রেপ্তারের মাধ্যমে দেশের অপরাধজগতের একটি বড় চক্র ভেঙে পড়েছে। এটি প্রমাণ করে যে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে এবং দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *