তারাবি নামাজ হলো ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা শুধুমাত্র রমজান মাসেই আদায় করা হয়। এটি এশার নামাজের পর পড়া হয় এবং মুসলিমদের জন্য বিশেষ সওয়াবের একটি সুযোগ নিয়ে আসে। আসুন, তারাবীহ নামাজের গুরুত্ব, ফজিলত, পড়ার নিয়ম এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানি।

তারাবি নামাজের পরিচিতি ও গুরুত্ব
তারাবি নামাজ মূলত সুন্নতে মুআক্কাদা (নিয়মিতভাবে পালনীয় সুন্নত), যা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নিজে আদায় করেছেন এবং সাহাবিরা তা অনুসরণ করেছেন। এটি রমজানের অন্যতম বিশেষ আমল, যা আত্মশুদ্ধি, গুনাহ মাফ এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য সহায়ক।
হাদিসের আলোকে তারাবির ফজিলত
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,
“যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের আশায় রমজানে তারাবি নামাজ আদায় করবে, তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।” (বুখারি, ২০০৮)
এই হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, তারাবি নামাজ আত্মশুদ্ধি এবং গুনাহ মাফের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তারাবি নামাজের রাকাত সংখ্যা
তারাবি নামাজের রাকাত সংখ্যা সম্পর্কে ইসলামে ভিন্ন ভিন্ন মতামত পাওয়া যায়।
- ৮ রাকাত – কিছু মুসলিম ৮ রাকাত পড়াকে যথেষ্ট মনে করেন, কারণ নবী (সাঃ) সাধারণত ৮ রাকাতের বেশি পড়েননি।
- ২০ রাকাত – হজরত উমর (রাঃ) সাহাবিদের ২০ রাকাত তারাবি পড়তে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন এবং মুসলিম উম্মাহ দীর্ঘদিন ধরে এটি অনুসরণ করে আসছে।
- ৩৬ বা ৪০ রাকাত – কিছু অঞ্চলে আরও বেশি রাকাত পড়ার প্রচলন রয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে, মুসলিমরা তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী তারাবি নামাজ পড়তে পারেন। তবে ২০ রাকাত পড়া সর্বাধিক প্রচলিত।
তারাবি নামাজ পড়ার নিয়ম
তারাবির নিয়ত:
তারাবীহ নামাজ পড়তে গেলে প্রথমে নিয়ত করতে হয়। উদাহরণস্বরূপ:
“আমি দুই রাকাত তারাবীহ নামাজ আদায় করছি, শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, মুখ তাকবিলের দিকে।”
তারাবির পদ্ধতি:
- এশার ফরজ ও সুন্নত নামাজ আদায় করার পর তারাবি নামাজ শুরু করতে হয়।
- প্রতি দুই রাকাত করে সালাম ফিরিয়ে পড়তে হয়।
- সাধারণত প্রতি ৪ রাকাতের পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়া হয়, যা “তারাবাহ” নামে পরিচিত।
- কুরআন থেকে দীর্ঘ তিলাওয়াত করা উত্তম।
- ২০ রাকাত সম্পন্ন হওয়ার পর বিতির নামাজ পড়তে হয়।
তারাবির নামাজের সময় ও স্থান
তারাবীহ নামাজ সাধারণত মসজিদে জামাতের সাথে পড়া উত্তম, তবে কেউ চাইলে বাসায়ও পড়তে পারেন।
- সময়: এশার নামাজের পর থেকে সুবহে সাদিকের পূর্ব পর্যন্ত। তবে মধ্যরাতের পূর্বেই পড়া উত্তম।
- স্থান: মসজিদে জামাতে পড়া উত্তম, তবে মহিলারা চাইলে ঘরে পড়তে পারেন।
তারাবি নামাজের ইতিহাস
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) প্রথমদিকে তারাবি নামাজ জামাতে পড়েছিলেন, কিন্তু পরে তিনি আশঙ্কা করেছিলেন যে, এটি ফরজ হয়ে যেতে পারে। তাই তিনি বাসায় পড়া শুরু করেন।
হজরত উমর (রাঃ) খলিফা হওয়ার পর উম্মাহকে একত্রিত করতে জামাতের মাধ্যমে ২০ রাকাত তারাবি নামাজ চালু করেন, যা আজও মুসলিম বিশ্বে প্রচলিত রয়েছে।
তারাবি নামাজের উপকারিতা
✅ আত্মশুদ্ধি: এটি গুনাহ মাফের সুযোগ এনে দেয়।
✅ সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা: দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে নামাজ পড়লে শরীর সুস্থ থাকে।
✅ কুরআন তিলাওয়াত: তারাবীহর মাধ্যমে কুরআনের প্রতি মনোযোগ বাড়ে।
✅ সমাজের সংহতি: মসজিদে একত্রিত হয়ে জামাতে পড়লে মুসলিম সমাজের সংহতি বৃদ্ধি পায়।
তারাবীহ নামাজ পড়ার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ
- নামাজ পড়ার আগে হালকা খাবার খেয়ে নিন, যাতে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন।
- মনোযোগী হয়ে কুরআনের অর্থ বোঝার চেষ্টা করুন।
- জামাতে পড়ার চেষ্টা করুন, যাতে খুশু-খুজু বৃদ্ধি পায়।
- ধৈর্য ও নিয়মিততার সাথে নামাজ পড়ুন।
উপসংহার
তারাবি নামাজ রমজানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমল, যা আত্মশুদ্ধি, কুরআনের নৈকট্য ও আল্লাহর রহমত লাভের সুযোগ এনে দেয়। এটি মুসলিমদের এক বিশাল নিয়ামত, যা রমজানের রাতগুলোকে বিশেষভাবে বরকতময় করে তোলে।
আসুন, আমরা সবাই তারাবীহ নামাজের গুরুত্ব বুঝে নিয়মিতভাবে এই নামাজ আদায় করি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করি। আল্লাহ আমাদের সকলকে তার রহমত ও মাগফিরাত দান করুন। আমিন।
আরও পড়ুন- ইফতারের আগে দোয়া: ফজিলত, গুরুত্ব ও অর্থ