রমজান মাস মুসলিমদের জন্য বরকতময় ও পবিত্র একটি সময়। এই মাসে দিনের বেলা রোজা রাখা হয় এবং রাতে তারাবির নামাজ আদায় করা হয়। তারাবির নামাজ হলো বিশেষ সুন্নত ইবাদত, যা শুধুমাত্র রমজান মাসেই পড়া হয়। এই নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায় এবং রমজানের ফজিলত পূর্ণতা পায়। তারাবির নামাজের দোয়া পড়ার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে, কারণ এটি আল্লাহর রহমত লাভের অন্যতম মাধ্যম।

তারাবির নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত
রমজান মাসে তারাবির নামাজ পড়ার মাধ্যমে মুসলিমরা বরকত অর্জন করতে পারেন। হাদিসে এসেছে,
“যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের নিয়তে রমজানে তারাবির নামাজ আদায় করবে, তার পূর্ববর্তী সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।” (বুখারি, ২০০৮)
এ থেকেই বোঝা যায় যে, তারাবির নামাজ পড়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি আত্মশুদ্ধির জন্য অপরিহার্য।
তারাবির নামাজের দোয়া ও অর্থ
তারাবির নামাজের পর পড়ার দোয়া
“سُبْحَانَ ذِي الْمُلْكِ وَالْمَلَكُوتِ، سُبْحَانَ ذِي الْعِزَّةِ وَالْعَظَمَةِ وَالْهَيْبَةِ وَالْقُدْرَةِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْجَبَرُوتِ، سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْحَيِّ الَّذِي لَا يَنَامُ وَلَا يَمُوتُ، سُبُّوحٌ قُدُّوسٌ رَبُّنَا وَرَبُّ الْمَلَائِكَةِ وَالرُّوحِ، لَا إِلَهَ إِلَّا الله نَسْتَغْفِرُ الله نَسْأَلُكَ الْجَنَّةَ وَنَعُوذُ بِكَ مِنَ النَّارِ”
উচ্চারণ: “সুবহানাঝি-ল-মুলকি ওয়াল-মালাকূত, সুবহানাঝি-ল-ইজ্জাতি ওয়াল-আজমাতি ওয়াল-হাইবাতি ওয়াল-কুদরাতি ওয়াল-কিবরিয়াই ওয়াল-জাবারূত। সুবহানাল-মালিকিল-হাইয়িল-লাযি লা ইয়ানামু ওয়ালা ইয়ামুত। সুব্বুহুন কুদ্দুছুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালাইকাতি ওয়ার-রূহ। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ নাস্তাগফিরুল্লাহ, নাসআলুকাল জান্নাতা ওয়া নাঊযুবিকা মিনান্নার।”
বাংলা অর্থ: “পরম মহিমান্বিত রাজত্ব ও রাজসিক শক্তির অধিকারী, পরম মর্যাদাশীল, মহত্ত্ব ও শক্তির অধিকারী, পরম গৌরবময় ও শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী, যিনি অনন্তকাল জীবিত এবং মৃত্যু ও নিদ্রাহীন। তিনি সকল ফেরেশতা ও আত্মার প্রতিপালক। আমরা আল্লাহর নিকট জান্নাতের প্রার্থনা করছি এবং জাহান্নামের আগুন থেকে তাঁর কাছে আশ্রয় চাইছি।”
এই দোয়াটি পড়লে আল্লাহর রহমত লাভ করা যায় এবং গুনাহ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
তারাবির নামাজের দোয়া পড়ার গুরুত্ব
১. গুনাহ মাফের সুযোগ: তারাবির নামাজ ও দোয়া পড়লে পূর্ববর্তী গুনাহ মাফ হয়। ২. আল্লাহর নৈকট্য লাভ: এই দোয়া পড়লে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। ৩. রোজার পূর্ণতা: তারাবির নামাজ ও দোয়া রোজার বরকত বৃদ্ধি করে। ৪. নবীজির সুন্নত অনুসরণ: নবী (সাঃ) রমজানে তারাবির নামাজ আদায় করতেন এবং দোয়া করতেন।
তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম
- নিয়ত করা: তারাবির নামাজ ২০ রাকাত সুন্নত মুআক্কাদা (অনেক দেশে ৮ রাকাত পড়া হয়)।
- দুই রাকাত করে পড়া: তারাবির নামাজ দুই রাকাত করে পড়া উত্তম।
- তেলাওয়াত মনোযোগ দিয়ে শোনা: ইমামের কিরাত মনোযোগ দিয়ে শোনা সুন্নত।
- তারাবির দোয়া পড়া: নামাজ শেষে উপরোক্ত দোয়া পড়া গুরুত্বপূর্ণ।
তারাবির নামাজে আরও কিছু করণীয়
- সঠিক নিয়ম মেনে পড়া: ধীরে ধীরে ও খুশু-খুজুর সাথে নামাজ পড়া উচিত।
- সঠিকভাবে কুরআন তিলাওয়াত শোনা: তারাবির নামাজে কুরআনের দীর্ঘ অংশ তিলাওয়াত করা হয়, যা ধৈর্য সহকারে শোনা উচিত।
- পরিবারের সবাইকে নিয়ে পড়া: ঘরে বা মসজিদে তারাবির নামাজ আদায় করা এবং পরিবারের সবাইকে এতে উৎসাহিত করা।
- নফল দোয়া ও ইবাদত করা: তারাবির পর নফল ইবাদত করা এবং বেশি বেশি দোয়া করা উচিত।
তারাবির নামাজের দোয়া কবুলের জন্য কিছু টিপস
- একাগ্রচিত্তে দোয়া করুন: মনোযোগ দিয়ে দোয়া করলে তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয়।
- আল্লাহর প্রশংসা ও নবীজির প্রতি দরুদ পাঠ করুন: দোয়ার শুরুতে ও শেষে দরুদ পড়া দোয়া কবুলের সম্ভাবনা বাড়ায়।
- নিজের ও অন্যদের জন্য দোয়া করুন: আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পুরো উম্মাহর জন্য দোয়া করুন।
- ইখলাস ও আন্তরিকতার সাথে দোয়া করুন: দোয়া করার সময় আন্তরিক হতে হবে।
উপসংহার
তারাবির নামাজের দোয়া পড়া রমজানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমল। এটি রাসুল (সাঃ)-এর সুন্নত এবং ইসলামে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ। এই দোয়ার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারি এবং আমাদের দোয়া কবুল হওয়ার সুযোগ পাই। তাই রমজানের পবিত্র সময়ে দোয়া করা ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করা উচিত।
আরও পড়ুন- ইফতারের আগে দোয়া: ফজিলত, গুরুত্ব ও অর্থ