রমজান মাস মুসলিমদের জন্য একটি পবিত্র ও বরকতময় সময়। এ সময় সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি অর্জন করা হয় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টা করা হয়। ইফতার হলো রোজা ভাঙার মুহূর্ত, যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামে ইফতার এর দোয়া পড়ার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। রাসুল (সাঃ) ও সাহাবীরা এই সময় দোয়া করতেন এবং এটি আল্লাহর দরবারে অধিক গ্রহণযোগ্য বলে গণ্য হয়।

ইফতার এর দোয়ার গুরুত্ব ও ফজিলত
ইফতারের মুহূর্তটি দোয়া কবুলের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সময়। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে, রোজাদারের দোয়া আল্লাহ ফিরিয়ে দেন না।
হাদিসের আলোকে ইফতার এর দোয়া
হাদিসে এসেছে,
“তিন ব্যক্তির দোয়া কখনো ফিরিয়ে দেওয়া হয় না: ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া, রোজাদারের দোয়া যখন সে ইফতার করে এবং মজলুমের দোয়া।” (তিরমিজি, ২৫২৬)
এ থেকে বোঝা যায় যে, ইফতারের সময় দোয়া করা সুন্নত এবং এটি আল্লাহ তাআলার দরবারে কবুলযোগ্য।
ইফতার এর সময় পড়ার দোয়া ও তার অর্থ
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ইফতারের সময় যে দোয়া পড়তেন তা হলো:
“اللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَبِكَ آمَنْتُ وَعَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ وَعَلَى رِزْقِكَ أَفْطَرْتُ”
উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ওয়া বিকা আমান্তু ওয়া আলাইকা তাওয়াক্কালতু ওয়া আলা রিযকিকা আফতারতু।”
বাংলা অর্থ: “হে আল্লাহ! আমি তোমার সন্তুষ্টির জন্য রোজা রেখেছি, তোমার উপর ঈমান এনেছি, তোমার উপর ভরসা করেছি এবং তোমার দেওয়া রিজিক দ্বারা ইফতার করছি।”
এই দোয়াটি পড়লে আল্লাহ তাআলা বান্দার ইবাদত কবুল করেন এবং তাঁর রহমত বর্ষিত হয়।
কেন ইফতারের দোয়া গুরুত্বপূর্ণ?
১. দোয়া কবুলের মুহূর্ত: ইফতার এর আগে ও পরে দোয়া করলে তা দ্রুত কবুল হয়। ২. আল্লাহর নৈকট্য লাভ: এই দোয়া পড়লে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। ৩. রোজার বরকত বৃদ্ধি: ইফতারের সময় দোয়া করা রোজার পূর্ণতা আনয়ন করে। ৪. নবীজির সুন্নত পালন: নবী (সাঃ) ইফতারের আগে ও পরে দোয়া করতেন, তাই আমরাও তাঁর অনুসরণ করব।
ইফতার এর সময় আরও কিছু করণীয়
- শুকনো খেজুর বা পানি দিয়ে ইফতার করা: নবী (সাঃ) খেজুর ও পানি দিয়ে ইফতার করতেন।
- দোয়া পড়ে ইফতার করা: ইফতার শুরু করার সময় উপরের দোয়াটি পড়া সুন্নত।
- ইফতারের সময় পরিবার ও বন্ধুদের জন্য দোয়া করা: এই মুহূর্তে অন্যদের জন্য দোয়া করলে তা বিশেষভাবে কবুল হয়।
- নফল দোয়া ও জিকির করা: ইফতার এর আগে বেশি বেশি নফল দোয়া করা উচিত।
ইফতার এর দোয়া কবুলের জন্য কিছু টিপস
- একাগ্রচিত্তে দোয়া করুন: মনোযোগ দিয়ে দোয়া করলে তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয়।
- আল্লাহর প্রশংসা ও নবীজির প্রতি দরুদ পাঠ করুন: দোয়ার শুরুতে ও শেষে দরুদ পড়া দোয়া কবুলের সম্ভাবনা বাড়ায়।
- নিজের ও অন্যদের জন্য দোয়া করুন: আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পুরো উম্মাহর জন্য দোয়া করুন।
- ইখলাস ও আন্তরিকতার সাথে দোয়া করুন: দোয়া করার সময় অন্তর থেকে চাইতে হবে।
উপসংহার
ইফতার এর দোয়া পড়া রমজানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমল। এটি রাসুল (সাঃ)-এর সুন্নত এবং ইসলামে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ। এই দোয়ার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারি এবং আমাদের দোয়া কবুল হওয়ার সুযোগ পাই। তাই রমজানের পবিত্র সময়ে দোয়াগুলো যথাযথভাবে পড়া ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করা উচিত।
আরও পড়ুন- ইফতারের আগে দোয়া: ফজিলত, গুরুত্ব ও অর্থ